গত রোববার রাতে বুয়েটের শের ই বাংলা হলে আবরার ফাহাদ নামে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনার পর বুয়েটের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের নি’র্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলছেন।
তেমনি একটি নি’র্যাতনের ঘটনা লিখেছেন বুয়েটের সাবেক এক ছাত্র। সেখানে তিনি বর্ণনা করেছেন ২০১৫ সালের বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদারের নি’র্যাতনের কথা।
এই শুভ্র জ্যোতি টিকাদার বুয়েটের এক ছাত্র ও কোরআনের হাফেজকে বে’ধড়ক পে’টান। এই ছাত্রলীগ নেতা সেই কোরআনের হাফেজের মুখে লাথি মারেন। আরেকজন ছাত্রলীগ নেতা নি’র্যাতিত ছাত্রের ক্ষত মুখে লবণ ছিটিয়ে দেন।
নি’র্যাতনের ঘটনা বর্ণনাকারী বুয়েটের সাবেক সেই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার নিজ চোখে দেখা। টিউশনি করে নজরুল হলে ঢোকার আগেই আউলার গেট থেকেই শুনতে পেলাম গগণবিদারী আ’র্তনাদ।
ঢুকতেই দেখি ইউকসুর সামনে কেউ পড়ে আছে। বুঝলাম সেই একই টাইপ ঘটনা। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম যে মার খাচ্ছে সে পরিচিত এক ভাই, উনি কোরানের হাফেজ ।
তিনি আরও বলেন, ‘শুভ্র জ্যোতি তাকে মাটিতে ফেলে তার পবিত্র মুখমন্ডলে লাথি দিচ্ছে। একজন হাফেজের মুখে! তারপর কোত্থেকে একটা মোটা বাটাম নিয়ে এসে গায়ের সর্বশক্তি পিটাতে লাগল শুভ্র।
কে যেন ক্যান্টিন থেকে লবণ নিয়ে এসে দিল ০৭ ব্যাচের তন্ময়কে। সে ভাইকে তুলে তার র’ক্তাক্ত মুখে লবণ লাগায় দিল। এরপরে আর সহ্য করতে পারিনি, হলে চলে আসি।
সাবেক বুয়েটের এই শিক্ষার্থী আরও বরেন, ‘যে কদিন ক্যাম্পাসে ছিলাম, শুভ্র জ্যোতির দিকে তাকালেই তার সেই নৃ’শংস চেহারার কথা মনে পড়ত। তার আ’ত্মহত্যার খবর শুনে এক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিলাম সেদিন। ও হ্যাঁ, তখন ডিএসডব্লিউ ছিল চামচা দেলোয়ার! এই লোকটা সরাসরি দায়ী ছাত্রলীগের হাতে ক্যাম্পাসকে তুলে দেওয়ার পেছনে।
উল্লেখ্য, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার চলতি বছরের (২০১৯, ৪জুন) আ’ত্মহত্যা করেন। এই দিন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি বাসা থেকে তার ম’রদেহ উদ্ধার করা হয়।
আগের দিন রাতে (সোমবার দিবাগত) কোনো এক বিষয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। ১২টার পর শুভ্র তার রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। স্ত্রী রাতে ছিলেন পাশের রুমে। রাতে আর কেউ কারো খোঁজ নেননি।’ পরে বিকালে শুভ্র জ্যোতির ঝুলন্ত লা’শ উদ্ধার করা হয়।
শুভ্রর স্ত্রীর বরাত নিউ মার্কেট থানার এসআই আলমগীর বলেন, ‘দুপুরেও উঠছে না দেখে শুভ্রর রুমের বাইরে ফ্রিজের ওপর যে চাবি ছিল, সেই চাবি দিয়ে তার স্ত্রী দরজা খুলে দেখেন শুভ্র ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় আছেন।
সঙ্গে সঙ্গে শুভ্রর বাবাকে ফোনে ঘটনাটি জানান তিনি। শুভ্রর বাবা পাশের ভবনেই থাকেন। তিনি এসে ঝু’লন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বঁটি দিয়ে ওড়না কেটে ছেলেকে নিচে নামান।’
শুভ্র জ্যোতির ম’রদেহের বর্ণনায় এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তার জিহ্বা বের করা অবস্থায় দাঁত দিয়ে চেপে ছিল। গলার সামনের অংশে কালো দাগ রয়েছে, চেহারা কিছুটা কালো হয়ে গেছে। পায়ের নিচও কালো হয়ে গেছে।
No comments:
Post a Comment