জাতীয় ডেস্ক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিকী নাজমুল আলমের বাবা শাহজাহান ছিলেন জামালপুর খাদ্য অফিসের নৈশ্য প্রহরী।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় নাজমুল। তাদের বাড়ি জামালপুর শহরের পাথালিয়ায়। 
অভাব অনটনের সংসার ছিলো তাদের। দোচালা টিনের ঘরে কেটেছে নাজমুলের শৈশব-কৈশোর। 
ছাত্রলীগে জড়িয়ে কপাল খুলেছে নাজমুলের। এখন তিনি ধনকুবের। কোটি কোট টাকার সম্পদের মালিক তিনি।
জানা গেছে, জামালপুর জিলা স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানোর মতো অবস্থাও ছিল না নাজমুলের বাবার। 
তার চাচা আশরাফুল সিদ্দিকী মামীম শহরের পাথালিয়া গ্রামের বকুলতলা মোড়ে মনোহারী দোকান করে পড়ালেখা খরচ জোগাতেন।
 হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করতো নাজমুল। স্বচ্ছল জীবনযাপন করা ছিল যেন স্বপ্নের মতো ব্যাপার।
জামালপুর জিলা স্কুল থেকে ২০০০ সালে এসএসসি ও ২০০২ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে নাজমুল। তখনো তাকে তেমন চিনতো না কেউ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন নাজমুল। অভিযোগ রয়েছে সূর্যসেন হলে থেকে তখন তিনি নিয়ন্ত্রণ করতো ঢাকার রমনা পার্ক ও আশেপাশের এলাকার টোকাইদের। 
তখন টোকাইদের বেত দিয়ে শাসনের ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। ডানপিটে স্বভাবের কারণে নজরে আসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি লিয়াকত শিকদারের। 
লিয়াকত শিকদারের হাত ধরেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন নাজমুল। তার সাথে সখ্য গড়ে ওঠে বর্তমানের আলোচিত ক্যাসিনোর গডফাদার যুবলীগের ইসমাইল হোসেন সম্রাটেরও।
 ছাত্রলীগের প্রভাবে ঢাকা ও তার নিজ এলাকা জামালপুরে তৈরি করেন একাধিক ক্যাডার বাহিনী। শুরু করেন বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য ও দখলদারি। কোকেন ও গোল্ডের ব্যবসাও করতেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
গুঞ্জন রয়েছে, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হবার পর ইডেন কলেজের এক নেত্রীর সাথে গড়ে ওঠে তার সম্পর্কও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিও ভাইরাল হয়েছিলো।
স্থানীয়দের অভিযোগ সাধারণ সম্পাদক হবার পর রাতারাতি পাল্টে যায় নাজমুলের নিজের অবস্থা ও তার পরিবারের চেহারা। 
বাবা শাহজাহান সিদ্দিকীকে খাদ্য অফিসের নাইট গার্ড থেকে সহকারী খাদ্য পরিদর্শক পদে পদোন্নতি, ছোট ভাই আদনান সিদ্দিকীকে সিম্ফনি মোবাইল ফোন ও বিকাশের ডিলার এবং চাচা মামীম সিদ্দিকীকে বাজাজ মোটর সাইকেল কোম্পানির ডিলার বাগিয়ে দেন নাজমুল।
তার বাবা শাহজাহান সিদ্দিকী লেখাপড়া করেছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। চাকরি নেন জেলা খাদ্য অফিসে নাইটগার্ডের। তার বেতনের টাকায় পরিবারের ভরণ পোষন চালানোও ছিল কষ্টসাধ্য। 
ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হবার পর একাধিক পদ টপকে খাদ্য পরিদর্শক হয়ে যান শাহজাহান। সম্প্রতি অবসরে গিয়েছেন। আগে নুন আনতে পান্তা ফুরায় শাহজাহান এখন চলাফেরা করেন বিলাস বহুল পাজেরো গাড়িতে।
চাচা মামীম সিদ্দিকী পাথালিয়া গ্রামের বকুলতলা মোড়ে মনিহারী দোকান করতো। পরে হাসপাতালের সামনে ওষুধের ফার্মেসি দেয়। সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে চাচা মামীমকে ড্রাগ লাইসেন্স ও প্যাথেড্রিনের লাইসেন্স বাগিয়ে দেয়। 
মামীম জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে গড়ে তুলে ‘সেভেন স্টার সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেটের প্রধান মামীম সিদ্দিকী। 
প্রচার রয়েছে, সেভেন স্টার সিন্ডিকেটের ইশারা ছাড়া হাসপাতাল এরিয়ায় গাছের একটা পাতাও নড়ে না। সিন্ডিকেটটি জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসকে বগলদাবায় রেখে প্রতিটি সেক্টর থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
নাজমুলের লন্ডনে একাধিক ব্যবসা ছাড়াও নিজ এলাকা জামালপুরেও রয়েছে নামে-বেনামে অসংখ্য স্থাপনা, মার্কেট ও জায়গা-সম্পত্তি। তার গ্রামের বাড়ি শহরের পাথালিয়ায় নিজের ও চাচা মামীম সিদ্দিকীর রয়েছে আলিশান বাড়ি।
 শহরের সকাল বাজারে সোয়া ৩ শতাংশ জমিতে আড়াই কোটি টাকা মুল্যের ৫তলা বিশিষ্ট জান্নাত ট্রেড সেন্টার কিনে ছোট ভাই আদনান সিদ্দিকীর নামে। 
জান্নাত ট্রেড সেন্টারটি নাম পরিবর্তন করে হয় সিদ্দিকী প্লাজা। মেডিকেল রোডে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শফিক সালেহ গেন্দার মালিকাধীন ৪তলা বিশিষ্ট ডা. বয়েজ উদ্দিন কমপ্লেক্স কিনেন চাচার ব্যবসায়ী পার্টনার রিপনের নামে। 
পোস্ট অফিসের পেছনে সম্প্রতি চাচা মামীম ও নাজমুলের যৌথ নামে কিনেছেন একতলা বাড়িসহ ১৫ শতাংশ জমি। যার আনুমানিক মুল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।
 শহরতলির কাজীর আঁখ এলাকায় প্রায় ১ কোটি টাকা মুল্যের ৯৫ শতাংশ জমি চাচা মামীমের নামে ক্রয় করেছেন। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর ফার্ম। 
স্টেশন রোডে ৭ শতাংশ জমির উপর প্রায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের ৩তলা বিশিষ্ট মার্কেট কিনেছেন চাচা মামীম ও তার ব্যবসায়ী পার্টনার আব্দুল আজিজের নামে। 
এসব সহায়-সম্পদের সিংহভাগই চাচা মামীমের নামে কিনেছেন বলে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে। এছাড়াও ছোটভাই আদনান সিদ্দিকীসহ তার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 
জামালপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের একাধিক দলিল লেখক জানিয়েছেন, নাজমুল সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তল্লাশি চালালে চাচা মামীম ও স্বজনদের নামে বহুসংখ্যক দলিল সন্ধান পাওয়া যাবে যা নাজমুলের টাকায় কেনা।
নাজমুলের চাচা আশরাফুল আলম সিদ্দিকী মামীম তার নামে নাজমুলের সম্পদ ক্রয় অস্বীকার করে বলেন, আমি ছোট থেকেই ব্যবসা করেছি, যেসব অভিযোগ এসেছে কোনটা আমি আর নাজমুল মিলে কিনেছি, কোনটা আমার টাকায় কেনা আবার কোনটা আমার ব্যবসায়ী পার্টনারের সাথে শেয়ারে কিনেছি। ছেলে বাবার নামেই সম্পদ ক্রয় করে না, চাচার নামে কিনবে? আমার নামে উঠা অভিযোগ অসত্য।
নাজমুলের বাবা মো: শাহজাহান বলেন, ছোট পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম, সহকারী খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে অবসর নিয়েছি। তাকে অন্যন্য বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।